Saturday, October 21, 2017

Blue Whale Game সম্পর্কে জেনে নিন অজানা কিছু, ব্লু হোয়েল এর প্রভাব আসলে বাংলাদেশে কতোটুকু।


বাংলাদেশে ব্লু হোয়েল গেমের বাস্তবতা ও নিউজ রিপোর্ট নিয়ে আমার কিছু কথা। জেনে রাখুন, কাজে লাগবে।

.
প্রথমেই বলে রাখি, ব্লু হোয়েল গেম সার্ফেস ওয়েবে কোথাও পাবেননা। এখন প্রশ্ন হলো, সার্ফেস ওয়েব কি? আমরা সবাই যেই ইন্টারনেট ইউজ করি ঐটাই Surface ওয়েব। সার্ফেস ওয়েবের সবগুলো ওয়েবসাইট সবার জন্য উন্মুক্ত যেমনঃ ফেসবুক, গুগল সহ বাকি যত সাইট। তাই ব্লু হোয়েল গেম সার্ফেস ওয়েবে ওপেন করা হয়নি কারণ এটা কেউ যেনো খুঁজে না পায়।
তাহলে ব্লু হোয়েল গেম কোথায় পাওয়া যাবে? উত্তর হলো, ডার্ক ওয়েবে। ডার্ক ওয়েব কি জানেন? ডার্ক ওয়েব হলো, ইন্টারনেটের বিশাল এক অন্ধকার জগত। তাই এটাকে Invisible ইন্টারনেটও বলা হয়। আমরা সাধারনত যেই ইন্টারনেট ইউজ করি তা সমগ্র ইন্টারনেট জগতের মাত্র ৫%, আর বাকি ৯৫% হলো ডার্ক ওয়েব।
.
আপনি যদি প্রশ্ন করেন, ডার্ক ওয়েবে কি কি থাকে? আমি আপনাকে বলবো, ডার্ক ওয়েবে কি কি নাই? ডার্ক ওয়েবে নাই এমন কিছুই নাই। মানে ডার্ক নেটে সবই আছে।
কোনো দেশের সব গোপন তথ্য, ফেইক পাসপোর্ট, লেটেস্ট মুভির পাইরেসি, আন্ডারওয়ার্ল্ডে যা যা হয়, কোনো প্রতিষ্ঠানের গোপন ফাইল, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ফল, লাইভ রেপ স্ট্রিম ভিডিও, লাইভ পর্নো, এমনকিছু বাকি নেই যা ডার্ক নেটে নাই।
.
ডার্ক ওয়েবে কিভাবে ঢুকবেন? ডার্ক ওয়েবে Opera, UC বা Google ক্রোমের মত নরমাল ব্রাউজার দিয়ে ঢুকতে পারবেন না। ডার্ক ওয়েবে ঢুকতে হলে আপনাকে টর (TOR) ব্রাউজার দিয়ে ঢুকতে হবে। টর ব্রাউজার আপনাকে ডার্ক ওয়েবে এক্সেস করাবে। পৃথিবীর কোন জায়গা থেকে আপনি ডার্ক ওয়েব ব্রাউজ করছেন সেটা কেউই ট্র্যাকিং করতে পারবেনা। ডার্ক ওয়েবে আপনি কোন জিনিসটা খুঁজতেছেন বা এক্সেস করতে চাইছেন সেটার বিশেষ একটা ওয়েবসাইট লাগবে, সেই সাথে লাগবে সেখানে এক্সেস করার পারমিশন। পারমিশন ছাড়া আপনি কোথাও ঢুকতে পারবেন না।
.
একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝাই। ধরুন, আপনার একটা শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। এই প্রতিষ্ঠানের সব গোপন তথ্য বা হিসেবনিকেশ আপনি ইন্টারনেটে জমা রাখতে চান কিন্তু তা সবার জন্য এভেইলেবল করতে চাননা, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ডার্ক ওয়েবে সাইট খুলে সবকিছু জমা রাখতে হবে। আপনার ডার্ক সাইটে যেকেউ ঢুকতে পারবেনা, তবে আপনার প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা ঢুকতে চাইলে তাকে আপনার পারমিশন নিয়ে আপনার সাইটে ঢুকতে হবে।
.
আপনি সার্ফেস ওয়েবে বা গুগলে সবকিছু সার্চ করে খুঁজে পাবেন কিন্তু ডার্ক ওয়েবে আপনি কোনোকিছু সারাজীবন সার্চ করলেও খুঁজে পাবেননা। কারণ ডার্ক ওয়েবে গুগলের মতো কোনো সার্চ ইঞ্জিন নাই। তাহলে ব্লুহোয়েল গেম কি ডার্ক ওয়েবেও পাওয়া যাবেনা? হ্যা, পাওয়া যাবে তবে আপনি ডার্ক ওয়েবে ব্লুহোয়েল খুঁজতে খু্ঁজতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তখন পেলেও পেতে পারেন। মানে ডার্ক ওয়েবের কোথাও কোথাও ব্লুহোয়েল আছে, তবে তা এভেইলেবল না।
.
ডার্ক ওয়েবে ব্লুহোয়েল যদি খুঁজে পান তাহলে প্রথমে আপনাকে গেম খেলার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই রেজিস্ট্রেশন কিন্তু পানিভাতের মতো কোনো সহজ ব্যাপার না। আপনাকে নিজের ইমেইল, পাসওয়ার্ড সহ যাবতীয় পার্সোনাল ইনফরমেশন দিয়ে রেজিস্ট্রেশনে ক্লিক করতে হবে। প্রথম কয়েকবার রেজিস্ট্রেশন ফেইল লিখা আসবে। আপনাকে বারবার সঠিক ইনফো দিয়ে কমপক্ষে ৭-৮ বার ট্রাই করতে হবেই। ভাগ্য খারাপ হলে আরো বেশিবার করা লাগতে পারে। রেজিস্ট্রেশন করার পর "ব্লুহোয়েল গেম অলরেডি খেলতেছে" এমন কারো ইনভাইটেশন পেতে হবে। ইনভাইটেশন ছাড়া ব্লুহোয়েল গেম শুরু করতেই পারবেন না। এখন আপনি নিজেই বলুন, এতো এতো কাঠখড় পেড়িয়ে আমরা বাঙালীরা ব্লুহোয়েল গেম খেলতে যাবো কোন দুঃখে?
জেনে রাখুন, প্রফেশনাল হ্যাকার বা তথ্যপ্রযুক্তি এক্সপার্ট ছাড়া কেউ ডার্ক ওয়েবে ঢুকবেনা। আমাদের মতো ৯৫% বাঙ্গালী ডার্ক ওয়েব কি সেটাই জানিনা।
.
ব্লুহোয়েল গেমটা কাদের জন্য উপযোগী জানেন? যেসব ছেলেমেয়েরা খুব ডিপ্রেসড। যারা মনে মনে সুইসাইড করার প্ল্যান করে ফেলেছে, পৃথিবীর প্রতি যাদের ঘৃণা চলে এসেছে কেবল তাদের জন্যই ব্লুহোয়েল গেম বানানো হইসে। শুধু তারাই ব্লুহোয়েল খেলতে পারবে। তাহলে অন্য কেউ খেলতে পারবেনা? সরি টু সে, আপনার আমার মতো সুস্থ মনের কেউই ব্লুহোয়েল খেলতে পারবেনা কারণ খেলার আগে গেমের এডমিন কিছু প্রশ্ন করে আপনার মানসিক অবস্থা যাচাই করবে। এডমিন যদি আপনার মাঝে ডিপ্রেশন খুঁজে না পায় তাহলে আপনি ব্লুহোয়েল খেলতে পারবেন না। এডমিনরা চায়না সবাই ব্লুহোয়েল খেলুক। তারা কেবল ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষ খুঁজে।
.
তাহলে বাংলাদেশে ব্লুহোয়েল গেমের বাস্তবতা কি? আমি বলবো, বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা ব্লুহোয়েল খেলবে সেই পরিস্থিতি এখনো আসেনি। আর আসার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। তবে সতর্কতা অবলম্বন করা ভালো।
.
এখন প্রশ্ন বাংলাদেশে ব্লুহোয়েল খেলে কয়েকজন মরসে এটা কি আদৌ সত্য?
আমি বলবো, এটা পুরোপুরি গুজব। সুইসাইড যেকেউ করতেই পারে, স্বাভাবিক ব্যাপার। তারমানে এই নয় যে সে ব্লুহোয়েলের স্বীকার। বাংলাদেশের সাধারণ পাবলিকের পক্ষে ব্লুহোয়েল খুঁজে বের করাই যেখানে প্রায় অসম্ভব সেখানে ব্লুহোয়েল খেলে কয়েকজন মারা গেছে পুরাই ভুঁয়া খবর। যে বা যারা গত কয়দিন আগে সুইসাইড করসে তাদের কারো ফোনেই ব্লহোয়েল গেম বা এরকম কিছুই পাওয়া যায়নি এমনকি তাদের শরীরেও কাঁটাছেড়ার কোনো দাগ পাওয়া যায়নি। আমাদের পত্রপত্রিকা সহ কিছু অনলাইন মিডিয়া কোনোকিছু যাচাই বাছাই না করে শুধুমাত্র তাদের নিউজের ভিউ বাড়ানোর জন্য সাধারণ কিছু সুইসাইডের ঘটনাকে ব্লুহোয়েলের স্বীকার বলে চালিয়েছে। বিশ্বাস না হলে আপনি সরেজমিনে সুইসাইড করা সেসব ছেলেমেয়ের বাড়িতে খোঁজখবর নিন।
.
প্রতিবছরই বিশ্বে শতশত ডিপ্রেসড ছেলেমেয়ে সুইসাইড করে। মজার ব্যাপার হলো, তাদের কারো কারো সুইসাইডের ঘটনাকে আন্তর্জাতিক কিছু মিডিয়া সর্বপ্রথম ব্লুহোয়েলের স্বীকার বলে খবর ছড়িয়েছিলো। গুজবটা মূলত সেখান থেকেই পুরো বিশ্বে ছড়িয়েছে। আর যারা সুইসাইড করেছে তাদের বেশিরভাগ ই মেয়ে। মেয়েরা ডার্ক ওয়েব কি সেটাই জানেনা, ব্লুহোয়েল কই পাবে? আমি আগেই বলেছি ডার্ক ওয়েবের অলিগলি প্রফেশনাল হ্যাকার বা আইসিটি এক্সপার্ট ছাড়া কেউই চিনবেনা, সেখানে এতো এতো মেয়ে ব্লুহোয়েল খেলে সুইসাইড করার ব্যাপারটা হাস্যকর।
.
আমাদের দেশে কিছু কুচক্রী মহল আছে যারা কোনো সেন্সিটিভ ঘটনাকে পুঁজি করে দেশে গুজব ছড়াতে চায়। তারাই গত কয়দিন BTRC এর নামে রাত ৯-১০ টা পর্যন্ত মোবাইল বন্ধ রাখার একটা গুজব ছড়িয়েছে ফেসবুক। BTRC এইরকম কোনো খবর প্রচার করেনি তা গতকাল বিটিআরসির সদরদপ্তর মিডিয়ার মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছে।
.
ব্লুহোয়েল গেম নিয়ে আমাদের মা বাবাদের কোনোরকম বিচলিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাদের বলবো, আপনারা শুধুমাত্র ছেলেমেয়েদের মোবাইল, ইন্টারনেট চালানোর ব্যাপারে সতর্ক হোন। তাদের নির্দিষ্ট একটা নিয়মের মাধ্যমে ডিসিপ্লিনে আনুন। তাদের সাথে মন খুলে মিশুন। তাদের যথেষ্ট সময় দিন। তাদের কথা শুনুন। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন।
.
মনে রাখবেন, ছেলেমেয়ে আপনার কাছ থেকে যতই দূরে যাবে ততই বিপদগামী হবে। ডিপ্রেশনে ভুগবে। তখন ব্লুহোয়েল থাকুক বা না থাকুক তারা একসময় সুইসাইড করার মতো ডিসিশন নিতেও পিছপা হবেনা।
.
চারদিকে ব্লুহোয়েল গেম নিয়ে মানুষের ভয়ভীতি দেখে নিজেই অবাক হলাম। তাই
অনেক সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে কেবল আপনাদের জন্যই পোষ্টটি লিখলাম। আপনার উপকারে আসলে অবশ্যই শেয়ার করে সবাইকে জানার সুযোগ দিবেন কারণ আমরা কেউই ব্লুহোয়েল নিয়ে আর কোনো বিভ্রান্তিতে থাকতে চাইনা।
প্রয়োজনে ভিডিওটি দেখে নিন,,,
↓          ↓           ↓
https://youtu.be/Z6rJK3mGFg4